তিন বছরেই ভাগ্য বদলে গেছে বাংলাদেশের ছিটমহলবাসীর

তিন বছরেই ভাগ্য বদলে গেছে বাংলাদেশের ছিটমহলবাসীর

সেবা ডেস্ক: ছিটমহল হচ্ছে একটি দেশের এমন কিছু অংশ, যা অন্য একটি বা দুটি রাষ্ট্রের ভৌগোলিক সীমার মাঝখানে অবস্থিত। তেমনি  বাংলাদেশ এবং ভারতের সীমান্তবর্তী ছিল ১৬২ টি ছিটমহল। ২০১৫ সালের আগে মানবেতর জীবনযাপন করত ছিটমহলবাসীগন। তারা কোনা নাগরিক অধিকার তাদের দ্বার প্রান্তে গিয়ে পৌছাতনা। বিভিন্ন ভুয়া পরিচয়ে তাদের নাগরিক সেবা নিতে হতো। কিন্তু ২০১৫ সালে তাদের নাগরিকত্বের পরিচয় দেন বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  বাংলাদেশ পায় ১১১টি ছিটমহল এবং ভারত পায় ৫১টি ছিটমহল। ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাত থেকে ছিটমহলগুলোর অধিবাসীরা বাংলাদেশি নাগরিকের মর্যাদা লাভ করে। নিজ পরিচয়ে তাদের বাঁচতে শিখিয়েছেন, আলোর পথ দেখিয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

যেই ছিটমহলবাসী আধুনিক যুগের সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল, সেখানে নিশ্চিত হয়েছে নিজ পরিচয়ে শিক্ষা-চিকিৎসার সুব্যবস্থা। আর্থসামাজিক ক্ষেত্রেও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। আগে ছিটমহলবাসীর সন্ধ্যার পর কুপি ছিল শেষ ভরসা। এখন সেখানে ঘরে ঘরে প্রদান করা হয়েছে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ। নিজ পরিচয়ে পাচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা। তিন বছরে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে ছিটমহলবাসীর। স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র নির্মাণ, আশ্রয়ণ প্রকল্প, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সহায়তা, ভোটার নিবন্ধন, মসজিদ-মন্দির, হাট-বাজার, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে রাস্তা-ঘাট, সেতু-কালভার্ট নির্মাণসহ সব বিভাগে নাগরিক সেবা প্রদান করায় বদলে গেছে তাদের এলাকার চিত্র ও সামাজিক অবস্থা। ছিটমহলের ঘরে ঘরে এসেছে স্বপ্নের দিন। নিজ দেশে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতে পারবে, পরাধীন খাঁচায় বন্দী পাখির মতো তাদেরকে মৃত্যু বরণ করতে হবে না- এই ভেবে তারা আজ আনন্দিত।

ছিটমহলবাসীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য সরকারের এলজিইডি মন্ত্রণালয় থেকে ৯৫ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্প বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সড়ক উন্নয়ন, ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণ। স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চত করতে বরাদ্দ করা হয়েছে ৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক। শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা করা হয়েছে ৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি আলিম মাদ্রাসা, বেশ কয়েকটি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে স্কুল। এছাড়াও নিশ্চিত করেছে বিধবা ভাতা, ১ হাজার ২৮৪ জনকে বয়স্ক ভাতা, ৩৩৮ অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধীর জন্য বিশেষ ভাতাসহ ১ কোটি ৩৮ লাখ টাকার ভাতা প্রদান। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, হস্ত শিল্প, গবাদি পশু পালন ইত্যাদি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারীদের দক্ষ করে তোলা হচ্ছে।

যাতায়াতের ব্যবস্থা ছিল একসময় খুবই করুণ। বর্তমানে তারা এখন পাকা রাস্তায় সাইকেল যোগে যেতে পারছে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়। সরকার কাজ করে যাচ্ছে নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য। ছিটমহল এলাকায় ১ হাজার ৬৫০ মিটার নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ এবং ৫ হাজার মিটার নদী খনন কাজ করা হয়েছে। এতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৪ কোটি ৩৫ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। কৃষকেরা ফসল উৎপাদনের জন্য সহজেই পাচ্ছে কীটনাশক। তারা স্থানীয় হাটে উৎপাদিত ফসল, ফল, সবজি বিক্রিও করতে পারছে।

সরকার ছিটমহলবাসীর জন্য সকল প্রকার নাগরিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য গ্রহণ করেছে বিভিন্ন প্রকল্প। দেশের সমুদ্র বিজয়ের পর ভারতের সাথে স্থল সীমান্ত মীমাংসা ছিটমহলবাসীকে দিয়েছে স্বাধীনভাবে বাঁচার সুযোগ। তারাও এখন বাংলাদেশের নাগরিক। ছিটমহলবাসী এখন পাচ্ছে স্বাধীনতার সুখ। এই সুখ তাদের এনে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


//


from Blogger http://bit.ly/2vy0HGI

Comments