সড়ক পরিবহন আইনে আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি

সড়ক পরিবহন আইনে আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি

সেবা ডেস্ক: শেষ পর্যন্ত সড়ক পরিবহন আইনে ভেটিং সম্পন্ন করেছে আইন মন্ত্রণালয়। গতকাল ১ আগষ্ট বুধবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এ আইনে ভেটিং সম্পর্কিত নথিতে অনুমোদন প্রদান করেন। এরপর নথিটি সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোশে পাঠানো হয়।

উক্ত নথিতে অনুমোদনের বিষয়ে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় যে শাস্তি হওয়া উচিত, তার সর্বোচ্চটাই থাকছে সড়ক পরিবহন আইনে।

গত ১৯৯১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিজের স্ত্রীকে হারিয়েছেন উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, আমি জানি স্বজন হারানোর কষ্ট কী। তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দুই শিক্ষার্থীর পরিবারের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানিয়ে বলেন, বছরখানেক ধরে সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সড়কে অনেক রকম সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখার চেষ্টা করেছি। জানার চেষ্টা করেছি কী কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে রাস্তার কারণে, গাড়ির কারণে, মানুষ চলাচলের কারণে, দুর্ঘটনা হতে পারে। এসব কারণের ব্যাপারে পর্যাপ্ত প্রভিশন করা হয়েছে কী না, সেগুলো (একই ঘটনা) যাতে না ঘটে, সে জন্য পর্যাপ্ত প্রভিশনের মধ্যে আছে কী না এবং সেখানে আইনের কোনও ফাঁকফোকর আছে কী না, সেসব দেখে এটা (সড়ক পরিবহন আইন) প্রস্তুত করা হয়েছে।

সম্প্রতি দুজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর কারণে তড়িঘড়ি করে আইনটি প্রস্তুত হলো কিনা এমন প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, এটা কাকতালীয় ঘটনা। এটা নিয়ে অনেক দিন ধরেই কাজ চলছিল। আর এরই মধ্যে এ রকম একটা দুর্ঘটনাও ঘটেছে। এ রকম ঘটনা যেন আর না ঘটে সে জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পক্ষ থেকে যা যা উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার সবই করা হবে। প্রধানমন্ত্রী চান আইনটি দ্রুত পাস হোক এবং অপরাধীরা শাস্তি পাক।

গত ২৯ জুলাই রবিবার দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনের বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির দুই শিক্ষার্থীর বাসচাপায় মৃত্যুর ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে আইনমন্ত্রী বলেন, এ ঘটনায় যে মামলা হয়েছে সেই মামলার বিচার যাতে দ্রুত হয় সেদিকে আমি খেয়াল রাখব। প্রয়োজনে আমি প্রসিকিউশনকে বলব, দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় বিচার যেন দ্রুত করা হয়।

এই আইনে কী কী বিধান আছে, শাস্তির বিধান কী- জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, এটা অত্যন্ত আধুনিক একটা আইন হয়েছে। আইনটিতে ত্বরিত গতিতে বিচারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এবং কোনও অপরাধী ফাঁকফোকর দিয়ে বের হতে পারবে না। কেউ বড় অপরাধ করে কম শাস্তি পাবে না। আবার ছোট অপরাধ করে বড় শাস্তি পাবে না।

তিনি বলেন, এছাড়া আইনে ১২টি পয়েন্ট রাখা হয়েছে, ড্রাইভারের নানা ভুলের শাস্তি হিসেবে ব্যবহার হবে এই পয়েন্টগুলো। বিদেশেও চালকের ভুল হলে পয়েন্ট ধরে শাস্তি হয়। এই আইনেও যে ১২টি পয়েন্ট রাখা হয়েছে তার থেকে কারো পুরো ১২ পয়েন্ট কেটে যায় তাহলে তিনি আর কোনো দিনই ড্রাইভিং লাইসেন্স পাবে না। তিন পয়েন্ট কাটা গেলে কি হবে সেটাও আইনে বলা আছে।

আইনমন্ত্রী বলেন, এখন এই আইনটা মন্ত্রিপরিষদে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। আইনটা অনুমোদন হলে সব পক্ষই ন্যায়বিচার পাবেন। মানুষ মেরে কেউ কম শাস্তি নিয়ে চলে যাবেন এটা তো হবে না। সব কিছু অত্যন্ত পুঙ্খানুপুঙ্খ দেখা হয়েছে। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে যে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে সেটা চূড়ান্ত বলে জানান মন্ত্রী। সড়ক ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে যেসব জিনিস রাখা উচিত সবই রাখা হয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, দুর্ঘটনার জন্য ক্ষতিপূরণের বিষয়টিও আইনে রাখা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৭ মার্চ এই আইনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। আইন মন্ত্রণালয় থেকে সড়ক পরিবহনে পাঠানো আইনটির খসড়া এখন চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে মন্ত্রিসভা। ওই অনুমোদনের পর তা পাস করতে সংসদে তোলা হবে।


//


from Blogger http://bit.ly/2LU5dcD

Comments