রৌমারী প্রতিনিধি: কুড়িগ্রাম জেলাধীন রৌমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্বপাড় চরাঞ্চলে আপতকালীন শস্য ক্ষেত কাউনের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।
কম খরচে অধিক ফলন ও ভালো দাম পেলে প্রতি বিঘায় প্রায় ১০ হাজার টাকা লাভ হবে কাউন চাষীদের।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চরাঞ্চলের মানুষের আয়ের উৎস কৃষি চাষাবাদ ও মাছ ধরা। উপজেলার চরশৌলমারী, বন্দবেড় ও যাদুরচর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্ব পাড়ে গ্রামবাসী নদী ভাঙ্গনের ফলে ফসলী জমি ও ভিটা মাটি হারিয়ে বালুরচরে ঘর বেঁধে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
বেঁচে থাকার লড়াইয়ে চরাঞ্চলের কৃষকরা কাউন চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার কাউন চাষ ভালো হয়েছে। ক্ষেতের সোনালি রঙের কাউন কাটা মাড়াই শুরু করেছে কৃষকেরা।
কুটিরচর গ্রামের কৃষক ওয়াজেদ আলী বলেন, আমি এক বিঘা জাগায় কাউন চাষ করেছি। আমার খরচ হয়েছে পনের শত টাকা থেকে ২হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে ফলন হয়েছে ৮ মণ। বাজারে এক মণ কাউনের দাম ১৫'শ থেকে ১৭'শ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় করা যাবে। এক বিঘার কাউন ফসল বিক্রয় করে আমার লাভ হবে প্রায় ১০ হাজার টাকা।
ফলুয়ারচর গ্রামের কৃষক আজিজুল হক জানান, চরের বালু মিশ্রিত জমিতে অন্য ফসলের তুলনায় কাউনের চাষ ভালো হয়। কাউন চাষে খরচ কম, সামান্য সেচ দিলে ফলন আরো বেশি ভালো হয়। রাসায়নিক কোনো সারের তেমন প্রয়োজন হয় না। সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে পাওয়া যায় আশাতীত ফলন। কাউন চাষে পরিশ্রম কম ও লাভ তুলনামূলক বেশি হওয়ায় কাউন চাষ চরাঞ্চলে দিন দিন বাড়ছে। এবার চরাঞ্চলে দু'শ বিঘা জমিতে কাউনের আবাদ হয়েছে।
কুটিরচর গ্রামের যুবক মাসুদ রানা বলেন, চরাঞ্চলের কৃষকরা কাউন শস্যটি পাটের বস্তায় প্যাকেট করে ঘরে সংরক্ষণ করছে। বর্ষা, বন্যা, খরাসহ বিভিন্ন আপতকালীন সময় এ এলাকার মানুষের কাছে নগদ অর্থ থাকেনা সে সময় কাউনই একমাত্র ভরসা তাদের।
এক সময় চরাঞ্চলের লোকজন পরিবার পরিজন নিয়ে কাউনের ভাত খেয়ে দিনাতিপাত করত।
আগে চরাঞ্চলের মানুষ ভাতের বিকল্প হিসেবে কাউনের ভাত খেতো। এখন কাউন দিয়ে সুস্বাদু পায়েস, পিঠা, নাড়ুসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য তৈরিসহ বিদেশে কাউনে চাউল বিক্রয় করা হয়। এ কারণে কাউনের চাহিদাও বেশি। এক মণ কাউন বিক্রি করে দুই মণ ধান কিনতে পাড়ে কৃষক। কাউন এখন চরাঞ্চলের মানুষের কাছে সোনার ফসল।
বন্দবেড় ইউনিয়নের কুটিরচর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আবুল হাশেম বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্ব পাড় চরাঞ্চলের মাটি কাউন চাষের জন্য খুব উপযোগী। বাণিজ্যিক ভাবে কাউন চাষের উদ্যোগ গ্রহন করলে বদলে যেতে পারে চরাঞ্চলের দরিদ্র কৃষকের ভাগ্য।
কাউন একটি পুষ্টিমান সমৃদ্ধ কৃষিপণ্য। কাউন থেকে আমিষ ও খনিজ লবণের চাহিদা পূরণ হয়। চরাঞ্চলে কাউনসহ বিভিন্ন অর্থকরী ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে আমরা কৃষকদের সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করছি।
সিএসডিকে এনজিও'র নির্বাহী পরিচালক মো. আবু হানিফ মাস্টার বলেন, আমার চরাঞ্চলের কৃষকদের জীবন মান উন্নয়নের লক্ষে অর্থকরী ফসল কাউন, চিনা, বাদাম, মাষকালাই, মুসুর ডালসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে কৃষকদের বীজ, সার, নগদ অর্থ, পরামর্শ প্রদানসহ কৃষি প্রদর্শনী প্লট স্থাপন ও মাঠ দিবস অনুষ্ঠান করে কৃষির টেকসই উন্নয়নে কাজ করছি।
//
from Blogger http://bit.ly/2Kk0PDP
Comments
Post a Comment